গাভীর গর্ভফুল পড়তে দেরী হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার : রিপন সরকার : Ripon Sarkar

 গর্ভফুল পড়তে দেরী হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার :


গাভীর 'গর্ভফুল পড়তে দেরী হওয়া' বলতে কী বুঝবো ?



যদিও, বাছুর জন্মের ২ থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যে সাধারণত: গাভীর প্লাসেন্টা বা, গর্ভফুল পড়ে যায় , যদি বাছুর জন্মের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গর্ভফুল না পড়ে, তবেই, তাকে 'গর্ভফুল পড়তে দেরী হওয়া' বা, 'রিটেইনড ফিটাল মেমব্রেন' বলা হয় ।


রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন এর কারণ :


যেসব কারণে, রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন-এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়, তা হলো : ১) গাভীর অ্যাবরশন হওয়া বা, অ্যাবরশনের হিস্ট্রি থাকা, ২) ডেলিভারিতে অনেক লম্বা সময় লাগা বা, অনেক কষ্ট হওয়া, ৩) জমজ বাছুর হওয়া, ৪) মরা বাছুর হওয়া, ৫) সময়ের বেশ আগেই ডেলিভারি হয়ে যাওয়া, ৬) গাভীর রক্তে ক্যালসিয়াম বা, শরীরে, অন্য পুষ্টি-ঘাটতি থাকা, ৭) গাভীর বয়স বেশী হওয়া, ৮) অতিরিক্ত গরম-ভ্যাপসা আবহাওয়াতে, ডেলিভারি হওয়া 

..ইত্যাদি ।


রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন এর সমস্যা :


বেশীরভাগ ক্ষেত্রে, কোন সমস্যা না হলেও , লক্ষ্য রাখতে হবে যে, গাভীর মেট্রাইটিস বা, টক্সেমিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কী না । কারণ, এ দুটি অবস্থাতেই, গাভীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে ।


রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন এর প্রতিরোধ এবং প্রতিকার :


১) রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন যা তে না হয়, সেজন্য আগে থেকেই , গাভীর ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম এবং, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দুর করতে হবে । রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন হয়ে গেলে, ক্যালসিয়াম-ভিটামিন দিয়ে, কোন লাভ নেই । 

২) অনেক খামারী এবং ডাক্তার, গাভীর জরায়ুতে পেসারী এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন । এতে কোন লাভই হয় না বরং, গর্ভফুল পড়তে , আরও বেশী সময় লাগে ( কারণ, রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেনটি , পচে বের হয়ে আসতে হবে , আর , জরায়ুতে দেওয়া অ্যানটিবায়োটিক, এই পচন প্রক্রিয়াকে স্লথ (slow/ delayed) করে ফেলে ।

৩) আগে, ম্যানুয়ালি , গর্ভফুল বের করার কথা বলা হলেও, এখন বলা হচ্ছে যে, এতে উপকারের চেয়ে, অপকারই বেশী হয়। । অর্থাৎ, মেট্রাইটিস এবং, টক্সেমিয়া ( গর্ভফুল পচার কারণে নি:সৃত টকসিনের রক্তে মিশে যাওয়া )-র সম্ভাবনা, আরও বেড়ে যায় । কেবলমাত্র , পচা গর্ভফুলের দুর্গন্ধ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার জন্য, গাভীর জরায়ুর ভেতর থেকে বের হয়ে থাকা, গর্ভফুলের অংশটুকু, কেটে ফেলতে বলা হয়। 

৪) প্রতিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্টেপ হলো : গাভীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা এবং , মেটরাইটিস বা, টক্সেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই , ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেনিসিলিন ( বা, অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ) এবং, মেট্রোনিডাজল এর কোর্স শুরু করা । 

৫) একটা বিষয় , মনে রাখা জরুরী । তা হলো, মেট্রাইটিস বা, টক্সেমিয়া না হলে, ২ থেকে ১১ দিনের মধ্যে, গর্ভফুল পচে, পড়ে যাবে এবং, কোন অ্যানটিবায়োটিক ব্যবহারের এর প্রয়োজন নেই । খামারীকে আরও মনে রাখতে হবে যে, এই ২ থেকে ১১ দিন, দুর্গন্ধের কারণে, গাভীর কাছে যাওয়াটাও, অনেক কষ্টকর হয়ে পড়তে পারে । এসময়, খামারীর করণীয় কেবল দুটি কাজ : ক) ধর্য্য ধারণ এবং, ২) পর্যবেক্ষণ ।

No comments:

Post a Comment