রসুন খাওয়ার ৩০টি উপকারিতা, ব্যবহার ও পুষ্টিগুণ। রিপন সরকার। Ripon Sarkar

রসুন খাওয়ার ৩০টি উপকারিতা, ব্যবহার পুষ্টিগুণ

 

by Ripon Sarkar

 

রসুন লিলিয়াসি পরিবারের এলিয়াম গণের বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ভারত বা তার আশেপাশে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চাষ হয়, তা ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশেও এর চাষ হয়ে থাকে। এর বোটানিক্যাল নাম Allium sativum Linn. নিম্নে রসুনের ভেষজ উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।[]

 

রসুন সর্বত্রই সহজে পাওয়া যায়। রসুনের এত গুণ যে একে একটি প্রসিদ্ধ রসায়নও বলা চলে। আমাদের দেশে প্রাচীন কাল থেকেই রসুন খাওয়ার এবং ওষুধ রূপে রসুন ব্যবহার করবার প্রচলন আছে। গ্রিস আর আরবদেশে প্রাচীনকাল থেকেই রসুন খাদ্য ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হত।

 

 

রসুনের মূলে তীক্ষ্ণ, পাতায় তিক্ত, ডাঁটায় বা নালে বা শাকের ডাঁটা কষায়, ডাঁটার ডগায় বা নালাগ্রে লবণ আর কলিতে মধুর রস আছে। এইভাবে দেখতে গেলে রসুনে পাঁচটি রস আছে। শুধু অম্ল রস নেই। এই একটি রস না থাকার জন্যে সংস্কৃতে রসুনকে রসোন (রস+উন) বলা হয়। উন অথাৎ কম। রসুনে একটি রসের অভাব (বা কম) তাই এই নামকরণ।

 

রোগ আরোগ্যের জন্যে রসুন খুব উপকারী এবং এর অনেক গুণ আছে বলে প্রাচীন আচার্যেরা রসুনকে অমৃতের সমান বলেছেন। কথিত আছে গরুর যখন ইন্ত্রের আলয় থেকে অমৃত অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিলেন তারই কয়েকটি বিন্দু পৃথিবীর মাটিতে পড়ে রসুনের উৎপত্তি হয়েছে। রসুনের এত গুণ। শরীরের সপ্ত ধাতুকে পুষ্ট করে বলে রসুনকে আয়ুর্বেদে রসায়ন বলা হয়েছে।

 

বাগভট্ট বলেছেন রসুনের তেলের মালিশ বাত এবং প্যারালিসিসের (অঙ্গ অসার হয়ে যাওয়া) পক্ষে ভাল। প্রাচীন বৈদ্য বাগভট্ট বলেছেন বায়ু রোগে রসুনের চেয়ে ভাল ওষুধ আর নেই। রসুনের মধ্যে বায়ুর প্রকোপ নাশ করবার শক্তি আছে। বাগভট্ট-এর সম্পর্কে উক্তি হল—‘বিদ্যতি বায়ৌ দ্রব্য রসুনাত্ পরম্ ’[] রসুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

 

রসুন সারা দুনিয়ায় ব্যবহৃত জনপ্রিয় সবজি মসলা

 

লোকায়তিক ব্যবহার

 

. ঢলা যৌবন: কোনো দিকেই একে ধরে রাখা যাচ্ছে না, এক্ষেত্রে () দুকোয়া রসুন গাওয়া ঘিয়ে ভেজে মাখন মাখিয়ে খেতে হয়, খাওয়ার শেষে একটু গরমজল পান করা উচিত। () আটার সঙ্গে রসুন বাটা মিশিয়ে রুটি বা লুচি করে খাওয়া। () ছাতুর সঙ্গে একটু, ঘি, চিনি একটু রসুন বাটা মিশিয়ে খেলেও হয়।

 

. যৌবন রক্ষায়: কাঁচা আমলকীর রস দুই বা এক চামচ নিয়ে তার সঙ্গে এক বা দুই কোয়া (নিজের শরীরের সহ্যাসহ বুঝে) রসুন বাটা খেতে হয়, এটাতে স্ত্রী-পুরুষ উভয়েরই যৌবন ধরে রাখে। যৌবনের প্রারম্ভ থেকে ব্যবহার করলে নারী থাকে তন্বী।

 

 

 

. দুই বা এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেয়ে একটু গরম দুধ খেলে যেসব ক্ষেত্রে উপকার পাওয়া যায় () স্বল্প মেধায় () বিস্মরণে () কৃমিতে () রাতকানায় () শুক্রতারল্য () চুলকণায় () পাথুরীরোগে () জীর্ণ জ্বরে () শরীরের জড়তায়।

 

. শিশুর স্বাস্থ্যহানি রোধে: হাড়সার শিশুর গায়ে মাংস লাগাতে চাইলে, ভাতের সঙ্গে টাটকা ঘোল সিকি (/) বা আধ (/) কোয়া রসুন কিছুদিন খাইয়ে দেখুন।

 

. পেটের অসুখে: এর সঙ্গে অনেক সময় শ্লেমাও যোগ থাকে, ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা জলে ২৫ ফোঁটা রসুনের রস মিশিয়ে খেলে অনেকক্ষেত্রে এটার উদ্বেগ চলে যায়। এক ভাগ রসুন, সৈন্ধব নুন ঘিয়ে সেঁকা হিং একের চারভাগ এবং আদার রস রসুনের দেড় গুণ পরিমাণ একসঙ্গে মিশিয়ে পান করলে পেটের রোগ বা উদররোগ সারে, পেটের জমা হওয়া চর্বি কমে যায় আর কোষ্ঠ সাফও ভাল ভাবে হয়ে যায়।[]

 

রসুন, চিনি সৈন্ধব নুন সমান পরিমাণে পিষে নিয়ে তাতে দু গুণ পরিমাণ জমা ঘি মিশিয়ে চেটে চেটে খেলে -খিদে বা মন্দাগ্নি, অজীর্ণ বা বদহজম, গ্যাস, পেটের ব্যথা, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সন্ধিবাত, প্রভৃতি রোগ সেরে যায়-যক্ষ্মা রোগীদের পক্ষেও এটি উপকারী। রসুনের কোয়া গাওয়া ঘিয়ে ভেজে নিয়ম করে দুপুর রাত্রিরে ভাত রুটি খাওয়ার আগে খেলে বায়ুর কষ্ট দূর হয়।[]

 

. বাতজনিত ব্যথায়: গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে দুই থেকে তিন কোয় রসুন বাটা খেতে হয়; অথবা থেকে ফোটা রসুনের রস ঘিয়ে মিশিয়ে খেলেও হয়। সরষের তেলে রসুন ভেজে সেই তেল মালিশ করলে বাতের যন্ত্রণা কমে যায়।[]

 

আরো পড়ুন: আদার বহুবিধ উপকারিতা, গুণাগুণ ব্যবহার

এছাড়া বাত ব্যাধিগ্রস্তরা রসুন প্রতিদিন আলাদা করে তোত খাবেনই এছাড়াও ভাত রুটির সঙ্গেও নিয়ম করে রসুন খাওয়া উচিত। মুগের ডাল, কলাইয়ের ডাল, ছোলার ডাল, মুসুরির ডাল প্রভৃতি বিভিন্ন ডালে সাঁতলানোর তরকারিতে, চাটনিতে শাকভাজায় এবং ফোড়ন হিসেবে রসুন দিলে একটি বিশেষ রুকির স্বাদের সৃষ্টি হয়। শরীরের বাত-নাড়ির রসুনের প্রভাব প্রবল উত্তেজক। রসুন পিষে নিয়েও বাত ব্যথাযুক্ত অঙ্গে তার প্রলেপ লাগানো হয়। 

রসুন প্রথম সপ্তাহে রসুনের পাঁচটি কোয়া রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালবেলা এই কোয়া পিষে জলে মিশিয় জল ছেকে খেয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রতি রাতে সাতটি করে কোয়া। তৃতীয় সপ্তাহে দশটি কোয়া এইভাবে খাওয়া চলবে।এইভাবে তিন সপ্তাহ খাওয়ার পর খাওয়া বন্ধ করা দরকার। এক সপ্তাহ বাদ দিয়ে আবার তিন সপ্তাহ ধরে রসুন খেয়ে যান। সঙ্গে মাখনও খাওয়া উচিত। এইভাবে রসুনের চিকিৎসা চালালে যাঁরা বাত-ব্যাধিতে ভুগছেন তাঁদের খুব উপকার হবে। রসুন জলে সেদ্ধ করে সেই জল ঠাণ্ডা করে ছেকে খাওয়ালে বাত-নাড়িতে শক্তি বৃদ্ধি হয়, মাংসপেশি বলবান হয়। বাত রোগের পক্ষে রসুন খুব উপকারী। []

 

. শরীর ক্ষয়ে: খায় দায়, শুকিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে এক বা দুই কোয়া রসুন বেটে এক বা আধ পোয়া দুধে পাক করে সেটা খেতে হয়। এটাতে ক্ষয় বন্ধ হবে; অধিকন্তু আস্তে আস্তে ওজন বেড়ে যাবে।

 

. মদ্যপায়ীর পেটে: অনেক সময় শূল ব্যথা ধরে, অথচ তাকে পরিত্যাগ করার থেকে তার মরাটা সহজ এই মনোভাব, ক্ষেত্রে তাঁরা একটা কাজ করে দেখতে পারেন, দুই এক কোয়া রসুন খাবেন, অসুবিধেটা আর থাকবে না।

 

. শুক্রতারল্যে: অল্প গরম দুধের সঙ্গে থেকে কোয়া রসুন বাটা খেলে শক্রতারল্য হয় না; অস্থির বল বাড়ে; অস্থির ক্ষয় হ্রাস পায়; শরীরের নিত্য ক্ষয় দূর হয়।

 

১০. রোগে প্রতিরোধক: নিত্য এক কোয়া রসুন অল্প গরম দুধে মিশিয়ে খেলে উপকার হবে।[] ভিটামিনের অভাবে যাদের শরীরে রোগ-প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে গেছে তাঁদের পক্ষে রসুন খাওয়া খুবই ভাল।[]

 

১১. নরম মাছে: সংসারে অনেক সময় ইচ্ছে-অনিচ্ছেয় অনেক কিছুই এসে যায়; সে ক্ষেত্রে একটু, রসুন বাটা দিয়ে রান্না করলে শরীরের ক্ষতিকারক দোষ অংশটা অনেক কেটে যায়, এটা কিন্তু আয়ুর্বেদ সম্মত বিধি নয়, এভাবে খেলে রক্ত দুষিত হতে পারে।

 

১২. কুকুরে কামড়ালে: বর্তমান পাশ্চাত্য চিকিৎসার ক্রমকে মানতে হবে, তবে যদি তার আদৌ প্রয়োজন না থাকে, তা লেও কিছুদিন রসুনের রস থেকে ফোঁটা অল্প গরম জলে বা দুধে মিশিয়ে খাওয়া ভালো। গ্রীক দেশের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতিতে এটা লিপিবদ্ধ আছে।

 

১৩. পুরাতন জ্বর: জ্বর ছাড়ে না; বাড়ে কমে কিন্তু একটু থেকে যায়, যাকে বলা হয় ঘুসঘুসে জ্বর। এক্ষেত্রে থেকে ফোঁটা রসুনের রসের সঙ্গে আধ বা এক চামচ গাওয়া ঘি মিশিয়ে খেলে দুই চার দিনের মধ্যে জ্বর ছেড়ে যাবে।[]

 

অল্প রসুন পিষে নিয়ে তাতে তিলের তেল বা টাটকা ঘি এবং সৈন্ধব নুন মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খাওয়ালে বাত কফের জন্যে যে জ্বর, সাধারণ প্রবল তাপের জ্বর সেরে যায়-সব রকমের বাত-ব্যাধিও সারে।[]

 

১৪. অটারিওস্কেলেরোসিস: (Arteriosclerosis) একটু, বয়স হলে শুদ্ধ রক্তবাহী শিরাগুলির স্থিতিস্থাপকতা অর্থাৎ ইলাসটিসিটি (elasticity) কমে যেতে থাকে, সে ক্ষেত্রে এটি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে অসুবিধেটা সৃষ্টি হয় না।

 

১৫. এমফাইসিমা (Emphisema) রোগ: এই রোগটি হাঁপানি, তবে অসুবিধে এটাতে নিঃশ্বাস ছাড়তে কষ্ট হয়। থেকে ফোঁটা রসুনের রস ঠাণ্ডা দুধে মিশিয়ে রোজ একবার করে খেলে অনেকক্ষেত্রে রোগের উপশম হয়।

 

১৬. মাথা ধরা বা ব্যাথায়: সর্দি হয় না অথচ মাথা ধরে (বায়ুর জন্য) এই সমস্যা সমাধানের উপায় দুই-এক ফোঁটা রসুনের রসের নস্যি নেওয়া। আর একটা কথা-এর রস গায়ে লাগলে চামড়ার কোনো অনিষ্ট করে না।

 

আরো পড়ুন: ওল বা ওলকচু খাওয়ার ঔষধি ষোলটি গুণাগুণ

১৭. ক্ষতে: ক্ষত কিছুতেই যেতে চায় না; একটু ঘিয়ের সঙ্গে রসুন বাটা ক্ষতে লাগালে ওটা কেটে যাবে।

 

১৮. অরুচি দূর করতে: রসুন, ধনেপাতা, আদা, সাদা আঙুর, চিনি সৈন্ধব লবণ একসঙ্গে পিষে নিয়ে চাটনি তৈরি করে খেলে অরুচি দূর হয় খাবার সহজে হজম হয়।

 

 

 

১৯. ক্ষতের ক্রিমিতে: ক্রিমিতে অনেক সময় পচা ঘায়ে পোকা জন্মে। বিশেষত গরু, মহিষের প্রায়ই এটা হতে দেখা যায়। সব ক্ষেত্রে রসুন বটে গায়ে লাগালে পোকা হয় না, আরো লেও মরে যায়।[]

 

২০. ঠাণ্ডাজনিত কারনে: শীতকালে শীতের প্রকোপ থেকে এবং নানারকম শীতকালীন ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে অনেকে কাঁচা রসুন গুড় একসঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেয়ে থাকেন। শীতকালে যদি নিয়মিত রসুন খাওয়া যায় তাহলে শরীর নিরোগ হয়, তেজস্বিতা বাড়ে, বল বৃদ্ধি হয় এবং সুস্থ শরীরে দীর্ঘ আয়ু লাভ হয় অর্থাৎ বহু বছর সক্ষমভাবে বেঁচে থাকা যায়। আগেই বলা হয়েছে রসুন একটি উত্তম রসায়ন। বুদ্ধি, আয়ু, বীর্য পুরুষত্ব বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে শীতকালে বর্ষাকালে নিয়মিত রসুন খাওয়া উচিত। []

 

২১. কৃমি রোগে: উদরকৃমিতে যাঁরা ভুগছেন এবং যাঁরা খুব রোগা রসুন খাওয়া তাঁদের পক্ষেও ভাল। রসুন বমি, বদহজম, আমযুক্ত মল আর উদরকৃমি রোগের প্রশমন করে।[]

 

২২. রক্তচাপ কমাতে: রসুনের মধ্যে যে এলাটল সালফাইড বা উড্ডয়নশীল দ্রব্যগুণ আছে তা ব্লাড প্রেসার বা রক্তচাপ বৃদ্ধি রোধ করে।[]

 

২৩. ব্রণ রোগে: ব্রণ রোগর সঙ্গে সঙ্গেই যদি রসুনের প্রলেপ লাগানো হয় তাহলে ব্রণ আর বাড়বে না।

 

২৪. সর্দি কাশি সারাতে: রসুন তুলসীপাতার রস সমান মাত্রায় অল্প পরিমাণে নিন। এতে অল্প শুকনা আদা বা শুঠের গুঁড়া গোলমরিচের গুঁড়া মেশাবেন এক কাপ দুধে এটা মিশিয়ে সকাল সন্ধ্যা দুবেলা নিয়মিত পান করুন-সর্দি কাশি সেরে যাবে। এটি সর্দির মহৌষধ। কয়েকটি রসুনের কোয়া দুধে ফুটিয়ে নিয়ে সেই দুধ ছেকে নিয়ে খাওয়ালে বাচ্চাদের হুপিং কাশি সেরে যায়। রসুনের ২০ ফোঁটা রস শরবতে মিশিয়ে চার ঘন্টা অন্তর খাওয়ালে হুপিং কাশি সারে।[]

 

২৫. প্যরালিসিস সারাতে: প্যরালিসিসে রসুন রসুনের একটি কোয়া আস্ত গিলে খেয়ে নিতে হবে। প্রতিদিন একটি করে রসুনের কোয়া বাড়িয়ে যেতে হবে। এই ভাবে একদিনে মাত্রা বাড়িয়ে বাড়িয়ে চল্লিশ কোয়া পর্যন্ত রসুন খাওয়া চাই। এরপরে প্রতিদিন এক কোয়া করে কমিয়ে আরও চল্লিশ দিন খেতে হবে। এইভাবে রসুনের কোয়া ৮০ দিন ধরে আস্ত গিলে নিলে প্যারালিসিস বা অঙ্গ অসার হওয়া সেরে যায়।

 

আট চা চামচ রসুন কোয়ার খোসা ছাড়িয়ে নিন। মিহি করে পিষে নিন। এতে অল্প পরিমাণে হিং, জিরে গুঁড়া, সৈন্ধব লবণ, শুকনা আদা বা শুঠের গুঁড়া, বিট নুন, গোলমরিচ পিপুলের গুঁড়া মিশিয়ে ছোলার দানার মতো গুলি পাকিয়ে নিন। এই গুলি নিয়মিত খেলে এবং এর সঙ্গে এরও বা রেড়ি গাছের মূলের (কবিরাজি দোকানে পাবেন) খেলে পক্ষাঘাত বা প্যারালিসিস সারে।[]

 

২৬. কানের ব্যথা সারাতে: রসুনের কোয়া সর্ষের তেলে ভেজে নিয়ে এই তেলের ফোঁটা কানে দিলে কানের ব্যথা সেরে যায়। কান পেকে গেলেও এতে লাভ হয়।

 

২৭. বিছের কামড়ে: রসুন পিষে লাগালে জ্বালা কমে যায়। রসুনের রসে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে চেটে খেলেও তৎক্ষণাৎ উপকার পাওয়া যায়।

 

২৮. চুলকুনি: রসুনের প্রলেপ চুলকুনিতে লাগালে চুলকুনির ওপরের পাপড়ি নরম হয়ে গিয়ে ঝরে যায় ত্বকের লাল অংশ বেরিয়ে আসে। এর ওপরে ভাল মলম লাগালে আরাম পাওয়া যায়।

 

২৯. দাদের জ্বালা সারাতে: রসুনের রস তিন দিন ধরে দাদে লাগালে দাদ সেরে যায়-বেশি জ্বালা করলে পরে একটু ঘি লাগিয়ে নেবেন।[]

 

গন্ধ দূর করতে: খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় রসুনের গন্ধটাই সমস্যা সৃষ্টি করে, উপলব্ধি সকলেরই হয়। তাই রসুনের কোয়ার উপরের খোসা ছাড়িয়ে, আধখানা করে কেটে টক দই পুর্বের দিন রাত্রে ভিজিয়ে রেখে তার পরের দিন খাওয়ার পুর্বে ওটা ধুয়ে নিলে অভা গন্ধটা আর থাকে না। এটাও না খেতে পারলে ঘিয়ে ভেজে শাক কিবা তরকারির সঙ্গে মিশিয়ে খাবেন। অথবা মাংস বা দইএর সঙ্গে সিদ্ধ করে খাবেন।[]

 


হাকিমি বা ইউনানি মতে, রসুন দাহক, তীক্ষ্ণ, মূত্রল অর্থাৎ প্রস্রাব বেশি করায়, পেটের বাত দূর করে, বিষহরণ করে কামোদ্দীপক। শরীর ফোলা, পক্ষাঘাত, গেঁটে বাত, যকৃৎ প্লীহাবৃদ্ধি, লিভার বেড়ে যাওয়া, খিদে বেড়ে যাওয়া, হার্ট ফুসফুসের রোগের অব্যর্থ ওষুধ বা মহৌষধ। একটানা জ্বর, শ্বেতী এবং রক্ত ঘন হওয়া দূর করে। গলার স্বর ভাল করে, দাঁতের রোগ সারায়।

 

বৈজ্ঞানিকদের মতে, . রসুন উষ্ণ, লঘু, মনের উৎসাহ বৃদ্ধি করে উদ্দীপিত করে, উদরবাত সারায়, কৃমি সারায়।

 

. এছাড়াও শরীর সবল করে, উত্তেজনা সৃষ্টি করে, কফ সারায়, পচে যাওয়া প্রতিরোধ করে, মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, বাত সারায় এবং বলকারক।

 

. রসুনে ক্যালসিয়াম, পাটাসিয়াম, ফসফরাস, প্রভৃতি খনিজ আছে। এছাড়াও আছে একালি আয়োডিন। রসুনে ভিটামিনবি’, ‘সিএবং অল্প পরিমাণে ভিটামিনআছে।

 

. রসুনের এলায়ল সালফাইড ফুসফুসের ক্ষয়, গ্রস্থিক্ষয়, গলগণ্ড, পেটের ক্ষয়, ত্বকের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

 

. পচন নিবারণের পক্ষে রসুনের গুণ অমৃতের মতো।

 

. রসুনে জীবাণুনাশক অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ প্রচুর পরিমাণে আছে।

 

. রসুন ক্ষয় রোগ নিবারণ করে। নিয়মিত রসুন খেলে ক্ষয়রোগ হয় না।

 

. শোথ জলোদর (ড্রপসি) রোগের পক্ষেও রসুন উপকারী।

 

. প্রসূতির পক্ষে রসুন খাওয়া তো খুবই ভাল।

 

১০. বৃদ্ধাবস্থায় যদি বহুদিন ধরে অসুস্থ থাকবার পর শারীরিক শক্তি কমে যায় তাহলে শীতকালে নিয়ম করে রসুন খাওয়া উচিত। রসুন ব্যাকটেরিয়া রোধ করে কাজেই শাসনালী ফুসফুসের অসুখে রসুন খেলে উপকার পাওয়া যায়।

 

১২. শ্বাসনালীর জমা হয়ে থাকা কফ সরল করে, কিডনির পাথর মূত্রের সাহায্যে বাইরে বের করে দেয়।

 

১৩. পচা গলা ঘায়ে রসুনের প্রলেপ খুবই উপকারী-রসুন ঘামের সমস্ত জীবাণু বিনষ্ট করে।

 

১৫. নিয়মিত রসুন খেলে শরীর বলবান, নিরোগ তেজোপূর্ণ হয়

 

বৈদ্য শাস্ত্রমতে রসুন রসুনের নানা নাম:

 

বৈদ্য শাস্ত্র মতে রসুনের অনেক গুণ আছে। অন্যান্য নানান ব্যাধি সারানোর সঙ্গে সঙ্গে রসুনের আরও কয়েকটি বিশিষ্ট গুণ হল রসুন খাদ্যরুচি বৃদ্ধি করে। বলকারক, পুষ্টি বৃদ্ধি করে, মেধা বাড়ায় এবং চোখের পক্ষে নানা গুণের সমাবেশের জন্যে রসুনের আরও কয়েকটি নাম আছে যেমন উগ্রগন্ধ (গন্ধ বেশি উগ্র বলে এই নাম), শীতবর্ধক, বাতারি (বাত সারিয়ে তোলে অথাৎ বাতের অরি বা শত্রু), অরিষ্ঠ, ভূত মহৌষধ।

 

নানা রোগে রসুনের প্রয়োগ

 

ম্যালেরিয়াএকজন চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেছেন চা চামচ গাওয়া ঘি গরম করে তাতে কয়েক ফোঁটা রসুনের রস ঢেলে সাত দিন ধরে সকালবেলা খেলে ম্যালেরিয়া সারে।

 

মাথাধরারসুনের কোয়া ছেচে কপালে প্রলেপ লাগাতে হবে বা খেতে

 

তড়কারসুনের রসের মালিশ

 

যক্ষ্মারসুনের রস খেলে উপশম হয়।

 

কানের ব্যথাকানে গরম রসুনের রসের ফোঁটা দিলে উপকার পাওয়া যায়।

 

জ্বর হাঁপানিরসুনের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়

 

বাতজ্বরতিল তেলে রসুনের কোয়া বেটে নিয়ে খুব অল্প পরিমাণে নিয়মিত খেলে উপকার পাওয়া যায়।

 

আয়ুদৌর্বল্যে বা স্নায়ুবিকাররসুনের রস খেলে বা শুকলে আরাম পাওয়া যায়।

 

মানসিক ভারসাম্য হারানোদুধে রসুনের কোয়া সেদ্ধ করে খেলে উপকার হয় ! প্রাচীনকালে রোমে পাগলামি সারাতে রোগীদের রসুন খাওয়ানো হতো।

 

মৃগী রোগেরসুন খেলে উপকার হয়।

 

চোয়াল আটকে যাওয়ায়মেরুদণ্ডে রসুনের রস মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।

 

ঘুম কম হলে অর্থাৎ অনিদ্রা রোগেরসুন খেলে ঘুম ভাল হয়।

 

যা, খোস,পাঁচড়ানারকোল বা সর্ষের তেলে রসুনের কোয়া নরম করে ভেজে নিয়ে ঘায়ে বা পাঁচড়ায় সেই তেলের প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায়।

 

বদহজমেঅল্প পরিমাণে রসুন প্রতিদিন নিয়ম করে খেলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

 

কামলা বা জণ্ডিস রোগেঅ্যালকোহলের সঙ্গে রসুনের রস মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।

 

বাত রোগেরসুন পেঁয়াজ বাত রোগের প্রসিদ্ধ ওষুধ। নিয়ম করে রসুন খেলে বাতের উপকার হয়। কোনো জায়গা মচকে গেলে রসুনের রস লাগালে বা রসুনের কোয়া নুন দিয়ে বেটে প্রলেপ লাগালে উপকার পাওয়া যায় এবং বাতের ব্যথা সেরে যায়। গেঁটে বাতে রসুনের বাটে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রলেপ দিলে তাড়াতাড়ি উপকার হয়। []

 

নিষেধ: মাছের সঙ্গে, কাঁচা দুধের সঙ্গে রসুন খেতে নেই, এর দ্বারা রক্ত দূষিত হয়।

 

রাসায়নিক গঠন:

 

(a) Organic sulphides viz, allyl propyl disulfide, diallyl disulfide, allicin, allisatin-I, allisatin-II. (b) Sulphur bearing amino acid iz, S-(2-carboxy propyl glutathinone).

 

(c) Essential oil.[]

 

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

 

তথ্যসূত্রঃ

 

. আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য: চিরঞ্জীব বনৌষধি খন্ড , আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ৫১-৫৩।

 

. সাধনা মুখোপাধ্যায়: সুস্থ থাকতে খাওয়া দাওয়ায় শাকসবজি মশলাপাতি, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, নতুন সংস্করণ ২০০৯-২০১০, পৃষ্ঠা,১৯৩-২০০।

 

বি. দ্র: ব্যবহৃত ছবি উইকিপিডিয়া কমন্স থেকে নেওয়া হয়েছে। আলোকচিত্রীর নাম: Kjokkenutstyr

 

No comments:

Post a Comment